25 Dec 2024, 11:05 am

বাংলাদেশে প্রথমবার পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব জেলিফিশ দিবস’

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জীববিজ্ঞানে রেডিয়াল বা অরীয় প্রতিসাম্যের প্রাণির উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা জেলিফিশকে। আর স্বচক্ষে এ জেলিফিশের দেখা পাওয়া যায় কক্সবাজারে এলে। তবে বঙ্গোপসাগরে প্রচুর জেলিফিশের দেখা পাওয়া গেলেও এ দেশে প্রাণিটি খাওয়া হয় না বলে এর কোনও অর্থনৈতিক মূল্য নেই। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেলিফিশ খাদ্য হিসেবে এবং ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরাও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে এই প্রাণিটিকে কাজে লাগাতে পারি। আর সেই পথ দেখাতেই বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিওআরআই) উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের পালন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব জেলিফিশ দিবস’।

দিনটির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ‘জেলিফিশকে জানি, এই সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগাই’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানান, বৃহস্পতিবার ৩ নভেম্বর সকালে প্রতিষ্ঠানটির সেমিনার হলে অনুষ্ঠেয় এই আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ-উন-নবী এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন চবির ফিশারিজ অনুষদের অধ্যাপক ড. আশরাফুল আজম খান, ভারতের আন্নামালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এস ব্রগদেশ্বরন এবং কী-নোট স্পিকার হিসেবে থাকবেন সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার। এ ছাড়া সেমিনারে আরও আলোচনা করবেন বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড টেকনোলজি স্টেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান, পাঞ্জাবের লাভলী প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি স্কলার অমিতা কুমারী চৌধুরী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি অনুষদের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. এম গোলাম মোস্তফা, বোরির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শিমুল ভুঁইয়া।

সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ জানান, সেমিনারটিতে জেলিফিশের বায়োলজি, টক্সিন ও মানবকল্যাণ, জেলিফিশ সংরক্ষণ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

বঙ্গোপসাগরে প্রচুর জেলিফিশের দেখা পাওয়া যায় বিজ্ঞানীরা জানান, মানুষের চেয়েও আদিম এই প্রাণিটির পৃথিবীতে আগমন প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে। আর এই প্রাচীন প্রাণীটিকে সম্মান ও ভালোবাসা জানাতে ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। তবে নামে ফিশ বা মাছ হলেও জেলিফিশ আসলে মাছ নয়। এদের বাহ্যিক গঠনের সঙ্গে মাছের গঠনের কোনও মিল নেই। এরা মূলত নিডারিয়া পর্বের অমেরুদণ্ড প্রাণী এবং এতই বৈচিত্র্যময় যে, অনেক বিজ্ঞানী তাদের কেবল ‘জেলাটিনাস জুপ্ল্যাঙ্কটন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জেলিফিশের মাছের মতো আঁশ, ফুলকা বা পাখনা থাকে না। এর পরিবর্তে তারা তাদের গোলাকৃতি ‘বেল’ খোলা এবং বন্ধ করার মাধ্যমে সাঁতার কাটে। তাদের শরীর ৯৮ ভাগ পানি দিয়ে গঠিত। যখন তারা উপকূলে ভেসে চলে আসার পর তারা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। কারণ তাদের দেহ দ্রুত বাতাসে বাষ্প হয়ে যায়। তাদের কোনও মস্তিষ্ক নেই, কেবল একটি প্রাথমিক স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে।

জেলিফিশ সমুদ্রের নিচের খাদ্যশৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও এরা অপেক্ষাকৃত ছোট ও সহজ প্রাণী। এরা সমুদ্রের সূক্ষ্ম বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এরা এক ধরনের প্লাংকটন বলে গভীর সমুদ্রের কচ্ছপ, সানফিশ, স্পেডফিশ, টুনা, হাঙর, কাঁকড়া এবং বিভিন্ন ক্রাস্টাশিয়ানের প্রিয় খাদ্য। অন্যদিকে সামুদ্রিক শৈবাল, জুয়োপ্লাংকটন এবং ছোট ছোট চিংড়ি জেলিফিশের প্রিয় খাদ্য। আর এভাবে এসব সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজনন সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জেলিফিশ একটি স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। প্রায়ই সমুদ্র বিজ্ঞানীরা জেলিফিশ এবং অন্যান্য জীবের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখার মাধ্যমে সমুদ্রের স্বাস্থ্য নিরীক্ষা করেন। এ ছাড়া কার্বন ক্যাপচারে এবং গভীর সমুদ্রে মাছের বিকাশের জন্য মাইক্রোহ্যাবিটেট তৈরিতেও জেলিফিশের অবদান রয়েছে। তাদের যথেষ্ট অভিযোজন ক্ষমতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা হুমকিস্বরূপ। তবে জেলিফিশের কিছু কিছু প্রজাতি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে মানুষের খাদ্যের অংশ হয়ে ওঠেছে। চায়না, জাপান এবং কোরিয়ার মতো বেশ কিছু জায়গায় এটি খুব মজার খাবার হিসেবে বিবেচিত।’

তিনি জানান, জাপানিরা জেলিফিশকে ক্যান্ডিতে রূপান্তরিত করেছে। এক ধরনের মিষ্টি ও নোনতা ক্যারামেল, চিনি, স্টার্চ সিরাপ এবং জেলিফিশ পাউডার দিয়ে তৈরি করা হয় সেই ক্যান্ডি। যা বেশ ব্যয়বহুল এবং সুস্বাদুও বটে। এ ছাড়াও সালাদে, নুডলসে এবং সয়া সস দিয়ে প্রায়ই এদের খাওয়া হয়। থাইল্যান্ড জেলিফিশ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এ ছাড়াও কোলাজেনের উৎস হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, ওষুধ শিল্পে এবং বিশ্বজুড়ে পাবলিক অ্যাকুরিয়ামে জেলিফিশ প্রদর্শিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4274
  • Total Visits: 1424023
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২২শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:০৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018